ত্বকের যত্নে কী কী করবেন?

Skincare routine guide for healthy glowing skin

সুস্থ ও উজ্জ্বল ত্বক আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়, আমাদের ত্বক সুস্থ রাখতে অনেক কিছুর প্রয়োজন হয় না। শুধু দরকার নিজের যত্ন নেয়া। আপনি যদি শুধু ফর্সা ত্বক নয়, বরং হেলদি ও গ্লোইং দেখাক, তাহলে আপনার স্কিন টাইপ বুঝে নিয়মিত স্কিনকেয়ার রুটিন মেনে চলা দরকার। আমাদের আজকের ব্লগে জানাবো, ত্বক কী? কেন এর যত্ন নেয়া প্রয়োজন , ত্বকের ধরনভেদে কোন রুটিন অনুসরন করবেন, এবং কোন ধাপে কী কী ব্যবহার করবেন সবকিছু নিয়ে বিষদ আলোচনা।

ত্বক কী?

ত্বক আমাদের পুরো শরীর জুড়ে রয়েছে। এটি আমাদের শরীরকে বাইরের পরিবেশ থেকে রক্ষা করে, শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং সংবেদন অনুভব করায়। আমাদের ত্বক মূলত তিনটি স্তরে বিভক্ত, যা হলোঃ 

  • এপিডার্মিস (বাহ্যিক স্তর), 
  • ডার্মিস (মাঝের স্তর), এবং 
  • হাইপোডার্মিস (সবচেয়ে ভেতরের স্তর)।

 

সৌন্দর্যে ত্বকের যত্ন কেন গুরুত্বপূর্ণ?

ত্বক আমাদের সৌন্দর্যের খুব বড় অংশ, সুস্থ ত্বক আমাদের স্বাস্থ্যও প্রতিফলিত করে। পরিবেশ দূষণ, মানসিক চাপ, ভুল খাবারের অভ্যাস, হরমোনাল ইমব্যালেন্স ইত্যাদির কারণে আমাদের ত্বকের সমস্যা বেড়েই যাচ্ছে। তাই, নিয়মিত যত্ন না নিলে আমাদের ত্বক রুক্ষ হয়ে যায় এবং বয়সের ছাপ দ্রুত চলে আসে। তাই সঠিক যত্ন নিলে আপনি পাবেন উজ্জ্বল, কোমল, ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বক।

ত্বকের ধরণসমূহ

 

Skincare routine guide for healthy glowing skin

 

  • তৈলাক্ত (Oily) ত্বক: এ ধরনের ত্বকে অতিরিক্ত সেবাম তৈরি হয়, যার ফলে ব্রণ, হোয়াইটহেডস ও ব্ল্যাকহেডস এর দেখা মেলে।
  • শুকনো (Dry) ত্বক: এ ধরনের ত্বকে পর্যাপ্ত পরিমাণ হাইড্রেশন বা তেল না থাকায় এটি রুক্ষ, খসখসে, এবং চুলকানিপূর্ণ হয়ে যায়। 
  • সংবেদনশীল (Sensitive) ত্বক: খুব সহজেই লাল হয়ে যায়, চুলকায়, এবং অনেক বেশি জ্বালা-পোড়া করে। এ ধরনের ত্বকে বেশিরভাগ উপাদান ই প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।
  • মিশ্র (Combination) ত্বক: এ ধরনের ত্বকে কিছু জায়গা তৈলাক্ত (বিশেষ করে T-zone), আর কিছু জায়গা শুষ্ক। 
  • ব্রণপ্রবণ (Acne-Prone) ত্বক: এতে সেবাম বেশি হয়, যা সহজেই পোর ব্লক করে দেয়, যার ফলে ব্রণ ও দাগ হওয়ার প্রবণতা বেশি হয়। 

 

দৈনন্দিন ত্বকের যত্নের ধাপ

প্রতিদিনের সঠিক স্কিনকেয়ার আপনাকে দিবে সুস্থ ও ঝকঝকে ত্বক। আপনার প্রতিদিনের ত্বকের যত্নে সঠিক নিয়ম গুলো একবার পড়ে নিনঃ-

daily skin care routine

১. পরিষ্কারকরণ (Cleansing)

আমাদের সকলের দিনে অন্তত দুইবার ত্বক পরিষ্কার করা দরকার, সকালে এবং রাতে। আমাদের ত্বকে জমে থাকা সারাদিনের ধুলো, ঘাম, মেকআপ ও সানস্ক্রিন ভালোভাবে উঠে যায়। ত্বক পরিষ্কার এর কারণে আমাদের পরবর্তী স্কিনকেয়ার প্রডাক্ট ভালোভাবে কাজ করতে পারে।

২. টোনিং (Toning)

ক্লিনিং এর পরে আমাদের ত্বক কিছুটা ডিহাইড্রেটেড হয়ে যেতে পারে। ত্বকের হাইড্রেশন ফিরিয়ে আনতে ব্যবহার করতে পারেন টোনার। এটি ত্বককে রিফ্রেশ করে ত্বক হাইড্রেশন যোগায় এবং পোরস কে সংকোচন করে।

৩. সিরাম (Serum)

এটা একটা কনসেন্ট্রেটেড স্কিন ট্রিটমেন্ট। আমাদের ত্বকের সমস্যার উপর ভিত্তি করে ( যেমনঃ- দাগ ছোপ, হাইপারপিগমেন্টেশন, ডিহাইড্রেশন, রিংকেল) উপযুক্ত সিরাম বেছে নিতে হবে। 

৪. ময়েশ্চারাইজিং (Moisturizing)

আমাদের ত্বকের জন্য ময়েশ্চারাইজার খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। আমাদের ত্বক যতই তৈলাক্ত হোক না কেন ব্যবহার করাই লাগবে, এটা ত্বকের হাইড্রেশন যোগায় ও ধরে রাখে সাথে প্রাকৃতিক স্কিন ব্যরিয়ায় মজবুত করে। 

৫. সানস্ক্রিন (Sunscreen)

রোদ আমাদের ত্বক সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে, তাই এর থেকে সুরক্ষা পেতে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা অত্যাবশ্যক। সানস্ক্রিন ব্যবহার না করলে ত্বকে ব্রণ, দাগ, বার্ধক্য সবকিছুই দ্রুত আসে। তাই আমাদের সকলের উচিত প্রতিদিন SPF- 30 বা তার বেশি সানস্ক্রিন ব্যবহার করা।

৬. এক্সফোলিয়েশন (Exfoliation)

আমাদের ত্বকে সপ্তাহে ১ – ২ বার স্ক্রাব বা কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর ব্যবহার করলে মৃত কোষ দূর হয় এবং ত্বক উজ্জ্বল ও সফট হয়। তবে কোনোকিছুই অতিরিক্ত করা উচিত নয়, অতিরিক্ত স্ক্রাবিং এ ত্বকে ক্ষতি হতে পারে। 

৭. ফেস মাস্ক (Face Mask)

আমাদের একমাসে কয়েকবার ফেস মাস্ক ব্যবহার করা দরকার। মাস্ক ব্যবহারে আমাদের ত্বকের পরিচর্যা করে ত্বককে আরাম দেয় এবং সাথে সাথে একটা গ্লোয়িং অনুভূতি দেয়। 

৮. স্পট ট্রিটমেন্ট (Spot Treatment)

ত্বকের ব্রণ, দাগ, পিগমেন্টেশন বা ইনফ্লেমেশন থাকলে নির্দিষ্ট জায়গায় ট্রিটমেন্ট প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন। এতে আপনার ত্বকের কিছু সমস্যা খুব সহজেই সমাধান হয়ে যাবে এবং নিয়ন্ত্রণে আসবে

৯. লিপ বাম ও ফেস অয়েল (Lip Balm and Face Oil)

আমাদের ঠোঁট ও ত্বকের গভীর হাইড্রেশনের জন্য লিপ বাম ও ফেস অয়েল খুব জরুরি। বিশেষ করে শীতকালে আমাদের ত্বক অনেক রুক্ষ হয়ে পড়ে, তাই শীতকালে ফেস অয়েল ব্যবহার করুন যা ত্বককে নরম রাখে। 

স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও ত্বকের যত্ন আরো যা যা করা উচিত?

ত্বকের যত্ন শুধু বাইরে থেকে প্রোডাক্ট লাগিয়েই সম্পূর্ণ হয় না, আপনি যতই সিরাম, ময়েশ্চারাইজার, আর সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন না কেন, যদি শরীরের ভেতরে থেকে পুষ্টির ঘাটতি থাকে, তাহলেও ত্বক নিস্তেজ ও অনুজ্জ্বল দেখাবে। তাই ত্বকের প্রকৃত সৌন্দর্য ধরে রাখতে হলে, আপনাকে ভেতর থেকেও সুস্থ থাকতে হবে, যেমন সঠিক খাবার খাওয়া, পানি পান করা, ঘুম ঠিক রাখা, আর মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা।

১. পানি পান – প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করুন। পানি আপনার ত্বককে ভিতর থেকে হাইড্রেট করতে সাহায্য করে।

২. সুষম খাদ্য – সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন, ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যুক্ত খাবার ত্বককে উজ্জ্বল করে।

৩. পর্যাপ্ত ঘুম – ঘুম আমাদের শরীর সহ ত্বকের জন্যও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত ঘুম আমাদের ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করে।

৪. স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ – অতিরিক্ত মানসিক চাপ আমাদের হরমোনের ভারসয়াম্য নষ্ট করে, এবং ব্রণ বাড়ায়।

করনীয়ঃ-

  • আপনার স্কিন টাইপ অনুযায়ী প্রোডাক্ট বেছে নিন।
  • যদি কোন সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয় তবে ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিন।
  • প্রতিদিন নিয়মিত স্কিনকেয়ার রুটিন মেনে চলুন।

বর্জনীয়

  • ঘন ঘন প্রোডাক্ট পরিবর্তন করা।
  • অতিরিক্ত স্ক্রাবিং।
  • রোদের বের হবার সময় সান স্কিন ব্যবহার না করা।
  • যথেষ্ট পরিমাণে পানি পান না করা।

সাধারণ ত্বকজনিত সমস্যা ও তাদের সমাধান

  • ব্রণ ও পিম্পল – নন-কমেডোজেনিক প্রোডাক্ট ও সালিসিলিক অ্যাসিডযুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন।
  • কালো দাগ ও দাগ-ছোপ – নাইআসিনামাইড, আলফা আরবুটিন বা ভিটামিন সি সেরাম ব্যবহার করুন।
  • বার্ধক্যজনিত লাইন ও বলিরেখা – রেটিনল, পেপটাইড ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সাপ্লিমেন্ট কার্যকর।

ত্বকের ধরন অনুযায়ী প্রোডাক্ট নির্বাচন

ত্বকের ধরণ  ব্যবহারযোগ্য প্রোডাক্ট
তৈলাক্ত জেল-ভিত্তিক বা অয়েল-ফ্রি ফর্মুলা ব্যবহার করুন।
শুষ্ক হাইড্রেটিং ইনগ্রিডিয়েন্ট যুক্ত পন্য ব্যবহার করুন।
সংবেদনশীল অ্যালকোহল ও ফ্র্যাগ্র্যান্স ফ্রি প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন।
মিশ্র T-zone এ অয়েল কন্ট্রোল, বাকি অংশে হাইড্রেশন মেইনটেইন করুন।

উপসংহার

ত্বকের যত্ন একটি প্রতিদিনের দৈনন্দিন প্রক্রিয়া। আপনি যদি ধারাবাহিক ভাবে সঠিক স্কিনকেয়ার রুটিন মেনে চলেন এবং স্কিন টাইপ অনুযায়ী প্রোডাক্ট ব্যবহার করেন, তাহলে আপনি সুস্থ, সুন্দর, এবং উজ্জ্বল ত্বক পাবেন।