সুস্থ, উজ্জ্বল, এবং ছাপহীন ত্বক পাওয়ার জন্য নিয়মিত রুটিন অনুযায়ী স্কিনকেয়ার এর সাথে সাথে আমাদের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যুক্ত পণ্য ব্যবহার অত্যন্ত কার্যকর। ত্বক প্রতিদিন ধুলো, দূষণ, UV রে, স্ট্রেস ও লাইফস্টাইল ফ্যাক্টরের কারণে নানা ধরনের ক্ষতির মুখোমুখি হয়।
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বককে ক্ষতিকারক ফ্রি র্যাডিক্যাল থেকে রক্ষা করে। এই ফ্রি র্যাডিক্যাল ত্বকের বার্ধক্য, কালো দাগ, রুক্ষতা এবং বিভিন্ন স্কিন সমস্যার প্রধান কারণ। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হলো এমন উপাদান যা এই ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিক্যালকে নিরপেক্ষ করে, ত্বকের কোষকে রক্ষা করে এবং সুস্থ রাখে।
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট কি?
এখন কথা হলো, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আসলে কি? সহজ ভাষায় এটি এক ধরনের মলিকিউল যা শরীর ও ত্বকের কোষকে ফ্রি র্যাডিক্যালের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। ফ্রি র্যাডিক্যাল কী? ফ্রি র্যাডিক্যাল হলো অস্থিতিশীল অণু, যা দূষণ, সূর্যের আলো, ধূমপান, স্ট্রেস এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার থেকে তৈরি হয়। মোট কথা আমাদের বদ-অভ্যাস-এর মাধ্যমে ফ্রি-র্যাডিক্যাল তৈরি হয়। আমাদের ত্বকে যখন এটি বেশি হয়ে যায় তা আমাদের ত্বকের কোলাজেন, ইলাস্টিনসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন নষ্ট করে ফেলে। আর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এই ক্ষতিকর প্রক্রিয়াকে থামিয়ে ত্বককে দীর্ঘদিন তরুণ ও সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
ত্বকে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের কাজ
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা ফ্রি র্যাডিক্যালকে নিরপেক্ষ করে ত্বকের কোষকে রক্ষা করে। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আরও কী কী করে –
- বয়সের ছাপ কমায় – এটি ত্বকের গভীর থেকে কোলাজেন ও ইলাস্টিন প্রোটিনের ভাঙন রোধ করে যা ত্বকের দৃঢ়তা ও স্থিতিস্থাপকতা ধরে রাখে।
- ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে – ভিটামিন C, নিয়াসিনামাইড এর মতো অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট অতিরিক্ত মেলানিনের উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে এবং বিদ্যমান দাগ হালকা করে ত্বক উজ্জ্বল করে।
- দূষণ ও সূর্যের ক্ষতি প্রতিরোধ করে – UV রে ও শহরের ধোঁয়া অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ত্বকের ডিএনএ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত করে। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এই ক্ষতিকর অণুগুলোকে নিরপেক্ষ করে এবং সেল ড্যামেজ থেকে ত্বককে রক্ষা করে।
- ইনফ্ল্যামেশন কমায় – ত্বকে প্রদাহ, লালচে ভাব, ব্রণ বা সংবেদনশীলতার সমস্যায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট প্রদাহনাশক হিসেবে কাজ করে, ত্বককে শান্ত রাখে এবং ব্রণপ্রবণ ত্বকের জ্বালাভাব কমায়।
- ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে – অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট স্কিন ব্যারিয়ারকে শক্তিশালী করে ত্বক থেকে পানি হারানো কমায়, ফলে ত্বক থাকে নরম, মসৃণ ও হাইড্রেটেড।
ত্বকের যত্নে ব্যবহৃত জনপ্রিয় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান
স্কিনকেয়ার প্রোডাক্টে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ব্যবহার হয়, যেগুলোর কাজ ভিন্ন ভিন্ন হলেও মূল লক্ষ্য হলো ত্বককে সুস্থ, উজ্জ্বল এবং বয়সের ছাপমুক্ত রাখা।
১. ভিটামিন C
কাজ –
- ভিটামিন সি, ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায় এতে ত্বক টানটান ও সজীব থাকে।
- ত্বকের কালো দাগ, পিগমেন্টেশন ও নিস্তেজভাব কমায়।
- সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করে।
প্রোডাক্ট সাজেশন –
- ভিটামিন-সি (C) এর জন্য সিরাম ব্যবহার করতে পারেন – Minimalist Vitamin C Face Serum
ব্যবহারের নিয়ম ও সময় –
- সকালে ক্লিনজিং ও টোনিংয়ের পরে সিরাম হিসেবে লাগান।
- সিরাম ব্যবহারের সাথে সাথে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন, যেন সূর্যের ক্ষতি থেকে সুরক্ষা পান।
২. ভিটামিন E
কাজ –
- ভিটামিন-ই (E) ত্বকের প্রাকৃতিক ব্যারিয়ার মজবুত করে।
- ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং শুষ্কতা কমায়।
প্রোডাক্ট সাজেশন –
- ভিটামিন-সি-ই (E) এর জন্য মশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন – Creme 21 All Day Cream With Vitamin E এবং Nivea Body Cream Cocoa Butter & Vitamin E
ব্যবহারের নিয়ম ও সময় –
- রাতে ভালোভাবে ক্লিনজিং করার পর ব্যবহার করুন।
৩. নিয়াসিনামাইড (Vitamin B3)
কাজ –
- ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে ও দাগ হালকা করে।
- পোর সাইজ ছোট করে।
- ত্বকের প্রাকৃতিক ব্যারিয়ার মজবুত করে।
প্রোডাক্ট সাজেশন –
- নিয়াসিনামাইড বা Vitamin B3 সিরাম – The Ordinary Niacinamide Serum এবং Good Molecules Niacinamide Serum
ব্যবহারের নিয়ম ও সময় –
- সকাল অথবা রাতে, ক্লিনজিং ও টোনিংয়ের পরে ব্যবহার করুন।
- নিয়াসিনামাইড বা Vitamin B3 এবং ভিটামিন C-এর সাথে একসাথে ব্যবহার না করাই ভালো। (সকাল-রাত আলাদা করে নিন)
৪. গ্রিন টি এক্সট্র্যাক্ট
কাজ –
- গ্রিন টি এক্সট্র্যাক্ট একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান।
- ব্রণ ও সংবেদনশীলতা কমায়।
- UV ক্ষতি প্রতিরোধে সহায়তা করে।
প্রোডাক্ট সাজেশন –
- গ্রিন টি এক্সট্র্যাক্ট এর জন্য ব্যবহার করুন Beauty Of Joseon Calming Serum Green Tea এবং Some By Mi Bye Bye Blackhead Miracle Green Tea Tox Bubble Cleanser
ব্যবহারের নিয়ম ও সময় –
- সকালে অথবা রাতে, সিরাম আকারে ব্যবহার করুন।
- ক্লিনজার হিসেবে ব্যবহার করুন।
৫. রেসভেরাট্রল (Resveratrol)
কাজ –
- কোলাজেন রক্ষা করে ও বার্ধক্যের লক্ষণ বিলম্বিত করে।
- পরিবেশগত ক্ষতি থেকে ত্বককে রক্ষা করে।
প্রোডাক্ট সাজেশন –
ব্যবহারের নিয়ম ও সময় –
- রাতে ক্লিনজিং ও টোনিংয়ের পরে সিরাম ব্যবহার করুন।
৬. কোএনজাইম Q10 (CoQ10)
কাজ –
- ত্বককে তরুণ রাখে।
- ত্বকের সূক্ষ্ম রেখা ও বলিরেখা কমায়।
- ত্বকের দৃঢ়তা বৃদ্ধি করে।
প্রোডাক্ট সাজেশন –
ব্যবহারের নিয়ম ও সময় –
- সকালে অথবা রাতে, ময়েশ্চারাইজারের সাথে ব্যবহার করুন।
- কোএনজাইম ৩০ বছরের পর থেকে রুটিনে অন্তর্ভুক্ত করা ভালো।
কোন কোন খাবারে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট পাওয়া যায়?
- ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার – কমলা, লেবু, পেয়ারা এসব ফল থেকে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরে প্রবেশ করে।
- ভিটামিন E সমৃদ্ধ খাবার: বাদাম, সূর্যমুখীর বীজ, অ্যাভোকাডো।
- পলিফেনল ও গ্রিন টি: গ্রিন টি, ডার্ক চকলেট, আঙুর।
- রেসভেরাট্রল উৎস: লাল আঙুর, ব্লুবেরি, চিনাবাদাম।
- কোএনজাইম Q10: মাছ, মুরগির মাংস, পালং শাক।
উপসংহার
আমাদের ত্বকের যত্নে ও ত্বক সুস্থ রাখতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট অপরিহার্য। আর শুধু বাইরের যত্নেই নয় আমাদের খাদ্যাভ্যাসেও অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। নিয়মিত ভিটামিন C, ভিটামিন E, নিয়াসিনামাইড, গ্রিন টি এক্সট্র্যাক্ট, রেসভেরাট্রল এবং CoQ10 সমৃদ্ধ প্রোডাক্ট ব্যবহার করলে ত্বক থাকবে উজ্জ্বল, মসৃণ ও বয়সের ছাপমুক্ত। সাথে সঠিক ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করলে ত্বকের স্বাস্থ্যকর ফলাফল আরও দীর্ঘস্থায়ী হয়।