আমরা মেকআপ করি নিজের সৌন্দর্য এবং নিজের ভিতরে থাকা শৈল্পিক দিন উন্মোচন করার জন্য। মেকআপ আমাদের শুধু সৌন্দর্য বাড়ায় না, এটি আমাদের দৈনন্দিন একটি রুটিনও বটে। মেকআপের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ফাউন্ডেশন।
ফাউন্ডেশন হলো মেকআপ এর বেস, এটি আমাদের ত্বকের রং সমান করতে সাহায্য করে, একটি নিখুঁত লুক দেয়। তাই ফাউন্ডেশন সঠিকভাবে ব্যবহারের প্রক্রিয়া জানা খুবই জরুরী। আমাদের আজকের ব্লগে আপনি জেনে যাবেন ফাউন্ডেশন-এর প্রতিটি ধাপ, কি কি টুলস ব্যবহার করবেন, এবং কি কি ভুল আমরা এড়াতে পারি।
ধাপে ধাপে ফাউন্ডেশন সেট করার সেরা কৌশলগুলো জেনে নিন
১. ত্বক পরিষ্কার ও মসৃণ রাখুন
আপনি যেরকম-ই মেকআপ করেন না কেন, ত্বককে পরিষ্কার রাখা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সারাদিনের ঘাম, ধুলোবালি, মৃত কোষ, বা আগের মেকআপের অবশিষ্টাংশ দূর করতে ত্বক পরিষ্কার করা আবশ্যক।
এগুলো থাকলে ফাউন্ডেশন সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায় না, ফাউন্ডেশন সমানভাবে বসে না। প্রথমে একটি হালকা ক্লিনজার ব্যবহার করে মুখ ধুয়ে নিই। পরিষ্কারের পরে যদি মুখে শুষ্ক অনুভূত হয় তাহলে হালকা এক্সফোলিয়েশন করা যেতে পারে। এক্সফোলিয়েশন আমাদের ত্বকে একটি স্মুথ এবং ন্যাচারাল ফিনিশ দেয়।
২. ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন
ক্লিনজার ব্যবহার এর পর যদি ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে, তাতে ফাউন্ডেশন ফেটে যায় বা লাইনগুলিতে জমে যায়। তাই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন যাতে ত্বকের আর্দ্রতা ঠিক থাকে। চেষ্টা করুন আপনার স্কিন টাইপ অনুযায়ী ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে।
যদি আপনার ত্বক শুষ্ক (ড্রাই স্কিন) হয় তাহলে ক্রিম বা বাটার-বেসড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। তেলতেলে ত্বক হলে জেল-বেসড বা লাইট হাইড্রেটিং লোশন ব্যবহার করুন। আর যদি মিশ্রিণ বা কম্বিনেশন হয় তাহলে হালকা, লিকুইড বা সিলিকন মিশ্রিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।
৩. ময়েশ্চারাইজার শুকাতে দিন
আমরা অনেকেই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করার সাথে সাথে ফাউন্ডেশন ব্যবহার কর্রি। এটি ফাউন্ডেশনকে মিশে ফেলে এবং বে-রং একটি লুক দেয়। তাই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের পর-পরেই ফাউন্ডেশন না লাগিয়ে ৫–১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এতে ত্বকে লোশন পুরোপুরি শোষিত হয়, যা ফাউন্ডেশন সমানভাবে বসতে এবং মেকআপ দীর্ঘস্থায়ী করতে সাহায্য করে।
৪. প্রাইমার ব্যবহার করুন
প্রাইমার হলো ফাউন্ডেশনের সেরা বন্ধু। প্রাইমার আমাদের ত্বককে মসৃণ করে, ত্বকের বড় পোরস ছোট করে, সাথে ফাইন লাইন এবং হালকা দাগ ঢাকতে সাহায্য করে। প্রাইমার ব্যবহার করার ফলে ফাউন্ডেশন অনেকক্ষণ স্থায়ী হয় এবং মেকআপে একটা ন্যাচারাল লুক দেয়।
তবে প্রাইমারের ক্ষেত্রেও স্কিন টাইপ অনুযায়ী ব্যবহার করা দরকার, যেমন- ড্রাই বা শুষ্ক ত্বকের জন্য হাইড্রেটিং প্রাইমার। তেলতেলে বা অয়েলি স্কিনের জন্য ম্যাটিফাইং প্রাইমার। এবং মিশ্রিত বা কম্বিনেশন স্কিনের জন্য নির্দিষ্ট অঞ্চলে টার্গেটেড প্রাইমার ব্যবহার করা দরকার। প্রাইমার আমাদের ত্বকের সাথে ফাউন্ডেশনকে সহজে মিশাতে সাহায্য করে।
৫. ত্বকের ধরন অনুযায়ী ফাউন্ডেশন বেছে নিন
আমাদের ত্বকের ধরণ অনুযায়ী ফাউন্ডেশন ব্যবহার করা উচিত এতে মেকআপের সাথে সাথে ত্বকও ভালো থাকে। ফাউন্ডেশন আপনার স্কিন টাইপের সঙ্গে মিলিয়ে বাছাই করা আবশ্যক।
তেলতেলে ( ওয়েলি ) বা ব্রণ প্রবন ত্বক – ম্যাট ফিনিশ এবং অয়েল-ফ্রি ফাউন্ডেশন।
ড্রাই বা শুষ্ক ত্বক – একটু শানিং বা হাইড্রেটিং ফিনিশ দেয় এরকম ফাউন্ডেশন।
স্কিনের জন্য – হালকা পানির মতো ফাউন্ডেশন।
সংবেদনশীল ত্বক – কোনরকম ঘ্রাণ মুক্ত এবং ডার্মাটোলজিস্ট-টেস্টেড ফাউন্ডেশন ব্যবহার করুন।
৬. নিজের শেড সঠিকভাবে নির্বাচন করুন
ফাউন্ডেশন ব্যবহারের জন্য নিজের ত্বকের শেড বাছাই করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফাউন্ডেশন বাছাই করতে মুখের চোয়ালের রেখায় টেষ্ট করুন। আমরা অনেকেই হাতে ব্যবহার করে ভুল করি। চোয়ালে লাগানোর পরে আলোতে দেখুন ফাউন্ডেশন ত্বকের সাথে মিলছে কিনা। তাছাড়াও আন্ডার টোন (Warm, Cool, Neutral) জানা জরুরি। ত্বকের সাথে মিল রেখে শেড ব্যবহার করলে আপনার মুখের স্বাভাবিক রঙের সঙ্গে ফাউন্ডেশন মিশে যাবে, যা ফ্ললেস এবং ন্যাচারাল লুক তৈরি করবে।
৭. সঠিক টুলস ব্যবহার করুন
ফাউন্ডেশন সঠিকভাবে ব্যবহারের জন্য সঠিক টুলস ব্যবহার করা প্রয়োজন। যেমন- ব্লেন্ডার, যা ন্যাচারাল ফিনিশ এবং হালকা এয়ারব্রাশ লুক দেয়। ফাউন্ডেশন ব্রাশ যা হাই-কভারেজ ও সমান লেয়ার তৈরি করে। হালকা কভারেজের জন্য কোনো টুলস ছাড়াই আঙুল ব্যবহার করতে পারেন। টুলস ব্যবহার করার আগে অবশ্যই পরিষ্কার রাখুন, নাহলে ব্যাকটেরিয়া জমে ব্রেকআউট হতে পারে।
৮. কালার কারেক্টর ব্যবহার করুন
যদি আপনার মুখে ডার্ক সার্কেল, লালচে দাগ বা পিগমেন্টেশন থাকে, কালার কারেক্টর ব্যবহার করুন। হালকা লালচে ভাব দূর করতে সবুজ কারেক্টর ব্যবহার করুন। কমলা বা পিচ রঙের কারেক্টর ব্যবহার করুন ডার্ক সার্কেল বা ব্রাউন স্পটের জন্য। ফ্যাকাশে ত্বক উজ্জ্বল করতে হলুদ কারেক্টর। কারেক্টরের পর ফাউন্ডেশন ব্যবহার করলে আপনার পুরো মেকআপ লুক নিখুঁত হয়।
৯. ফাউন্ডেশনের পর কনসিলার দিন
ফাউন্ডেশন ব্যবহারের পর যদি ডার্ক সার্কেল, ব্রণ দাগ বা অপ্রয়োজনীয় লালচে অংশ থাকে, সেখানে কনসিলার ব্যবহার করুন। কনসিলার আমাদের ত্বকে অতিরিক্ত কভারেজ দেয় এবং আপনার মেকআপকে আরও ফ্ল-লেস ও প্রফেশনাল দেখায়। তাই সবসময় ফাউন্ডেশনের সঙ্গে মিল রেখে কনসিলার ব্যবহার করুন।
১০. সেটিং পাউডার দিয়ে সেট করুন
ফাউন্ডেশন ঠিক জায়গায় স্থির রাখতে সেটিং পাউডার ব্যবহার করুন। এটি ফাউন্ডেশনকে দীর্ঘ সময় ধরে রাখে, অয়েল কন্ট্রোল করে এবং মেকআপকে আরও প্রফেশনাল ফিনিশ দেয়। তৈলাক্ত ত্বক হলে ট্রান্সলুসেন্ট পাউডার আপনার জন্য ভালো কাজ করবে, সাথে আপনি চাইলে সেটিং স্প্রে ব্যবহার করতে পারেন, যা ন্যাচারাল ফিনিশ এবং লং-লাস্টিং প্রভাব দেয়।
উপসংহার
ফাউন্ডেশন শুধুমাত্রই মেকআপের একটি ধাপ নয়, এটি আপনার লুকের প্রধান ভিত্তি। সঠিকভাবে ফাউন্ডেশন ব্যবহার করলে ত্বক থাকে ফ্ল-লেস, উজ্জ্বল এবং নিখুঁত। সঠিক ফাউন্ডেশন বেস মেকআপ আমাদের আত্মবিশ্বাসও বাড়ায়। সঠিক প্রাইমার, শেড, টুলস এবং সেটিং পদ্ধতি মেনে চলুন এবং প্রতিটি মেকআপ ই পারে আপনাকে প্রফেশনাল ফিনিশ দিতে।