উত্তর সমূহঃ-
চুল পড়া অনেক সময়ই শরীরের ভিতরের পুষ্টির অভাবের ইঙ্গিত দেয়। সঠিক খাদ্যাভ্যাস চুল পড়া প্রাকৃতিকভাবে কমাতে এবং চুল গজাতে সাহায্য করে।
কি কি খাবার গ্রহণ করবেন?
- প্রোটিন চুলের গঠন (ক্যারাটিন) তৈরি করে প্রতিদিনের খাবারে ডিম, লিন মাংস, মাছ, দই ও ডাল রাখা জরুরি।
- আয়রন চুলের গোড়া মজবুত করে ও গোঁড়ায় অক্সিজেন পৌঁছে দেয় ভিটামিন C-এর সঙ্গে খেলে শোষণ বাড়ে।
- বায়োটিন (ভিটামিন B7) চুল ঘন করে তোলে ডিমের কুসুম, কলিজা, বাদাম, মিষ্টি আলু ও অ্যাভোকাডোতে পাওয়া যায়।
- ওমেগা‑৩ ফ্যাটি অ্যাসিড স্ক্যাল্প পুষ্টি দেয় ও চুলের ঘনত্ব বাড়ায় ফ্যাটি মাছ ও বীজ নিয়মিত খেতে হবে।
- জিংক চুল পড়া কমায় ও গোঁড়া মেরামত করে ঝিনুক, কুমড়োর বীজ, মসুর ডাল, ছোলা খেতে পারেন।
- ভিটামিন C কোলাজেন তৈরি করে ও আয়রন শোষণ বাড়ায়—লেবু, কমলা ও রঙিন শাকসবজি খেতে হবে।
- ভিটামিন D ঘুমিয়ে থাকা হেয়ার ফলিকলকে সক্রিয় করে—সূর্যরশ্মি, মাছ, ডিম ও দুধ থেকে পাওয়া যায়।
- ভিটামিন E স্ক্যাল্পে রক্ত চলাচল বাড়ায় বাদাম, পালং শাক ও সূর্যমুখীর বীজ খেতে পারেন।
কী পান করবেন:
- পানি: স্ক্যাল্প ও চুলের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সবচেয়ে জরুরি।
- গ্রিন টি/পেপারমিন্ট টি: রক্ত চলাচল উন্নত করে, ফলে স্ক্যাল্প পায় পুষ্টি।
- স্মুদি: বেরি, পালং শাক, চিয়া সিড ও সাইট্রাস মিশিয়ে তৈরি স্মুদি চুলের জন্য সুপারফুডের মতো কাজ করে—খেতে পারেন সকালে বা ওয়ার্কআউটের পরে।
চুল শুধু সৌন্দর্যের জন্যই নয়। এটি শরীরের ভিতরের সমস্যার প্রথম সংকেতগুলোর একটি। আপনার ডায়েট বা খাদ্যাভ্যাসই এমন একটি জিনিস, যেটি আপনি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, এবং এটি চুল পড়া প্রতিরোধ ও ঘুরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশাল ভূমিকা রাখে।
আজকে আমরা জানব কী কী খাবার ও পুষ্টি আপনার ডায়েটে থাকা উচিত, যাতে আপনি ব্যয়বহুল কৃত্রিম সাপ্লিমেন্ট ছাড়াই চুল পড়া রোধ করতে পারেন। চলুন জেনে নেই, কোন কোন পুষ্টি জরুরি এবং কীভাবে তা ঠিকভাবে গ্রহণ করবেন।
চুল পড়া কমাতে ও চুল গজাতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান
চুলের গোড়া মজবুত রাখতে এবং চুল ঘন ও স্বাস্থ্যকরভাবে বাড়াতে, শরীরকে কিছু নির্দিষ্ট ভিটামিন, খনিজ, প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর চর্বি দরকার হয়। নিচে দেওয়া হলো এমন ৮টি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান কেন দরকার, কোন খাবারে পাওয়া যায়, আর কখন খাওয়া ভালো:
১. প্রোটিন চুলের গঠনের মূল উপাদান
আমাদের চুলের গঠন (ক্যারাটিন) প্রধানত প্রোটিন দিয়ে তৈরি। পর্যাপ্ত প্রোটিন না পেলে চুল পাতলা ও দুর্বল হয়ে পড়ে।
যেসব খাবারে পাবেন: ডিম, লিন মাংস (মুরগি, টার্কি), মাছ, গ্রীক দই, ডাল, বিউলি, টোফু, মসুর।
কখন খাবেন: সকালে, দুপুরে বা রাতে দিনের যেকোনো খাবারের সঙ্গে খেতে পারেন, যেন চুল নিয়মিত পুষ্টি পায়।
২. আয়রন চুলের গোড়া ও রক্ত চলাচলের জন্য
আয়রন শুধু শরীর নয়, চুলের জন্যও উপকারী। এটি চুলের গোড়ায় অক্সিজেন পৌঁছে দেয়। আয়রনের অভাবে চুল পড়া বেড়ে যায়।
যেসব খাবারে পাবেন: লাল মাংস, কলিজা, পালং শাক, মসুর, ছোলা, শুকনো খেজুর, ফোর্টিফায়েড সিরিয়াল।
কখন খাবেন: দুপুর বা রাতের খাবারে, ভিটামিন C যুক্ত খাবারের সঙ্গে (যেমন: লেবুর রস বা টমেটো সালাদ), এতে আয়রনের শোষণ ৩ গুণ বাড়ে।
৩. বায়োটিন (ভিটামিন B7) চুল ঘন ও শক্ত করতে

বায়োটিন ক্যারাটিন তৈরির জন্য অত্যন্ত জরুরি। এর অভাবে চুল ভঙ্গুর ও পাতলা হয়ে যায়।
যেসব খাবারে পাবেন: ডিমের কুসুম, কলিজা, বাদাম, মিষ্টি আলু, স্যামন মাছ, অ্যাভোকাডো।
কখন খাবেন: সকালের নাস্তা বা বেলা ১১টার স্ন্যাকসে বাদাম বা ডিম।
৪. ওমেগা‑৩ ফ্যাটি অ্যাসিড স্ক্যাল্পের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে
স্বাস্থ্যকর স্ক্যাল্প মানেই স্বাস্থ্যকর চুল। ওমেগা-৩ চুলের গোঁড়াকে পুষ্টি দিয়ে চুল পড়া কমায় ও ঘনত্ব বাড়ায়।
যেসব খাবারে পাবেন: স্যামন, ম্যাকারেল, সারডিন, ফ্ল্যাক্সসিড, চিয়া সিড, আখরোট।
কখন খাবেন: সপ্তাহে ২–৩ দিন মাছ খেতে পারেন। সকালে ওটমিলে বা স্ন্যাকসে চিয়া সিড মেশাতে পারেন।
৫. জিংক অতিরিক্ত চুল পড়া কমাতে
জিংক চুলের গোঁড়ায় কোষ গঠন ও মেরামতের জন্য জরুরি।
যেসব খাবারে পাবেন: ঝিনুক, গরুর মাংস, কুমড়োর বীজ, মসুর ডাল, ছোলা।
কখন খাবেন: দই বা বাদামের সঙ্গে স্ন্যাকসে কুমড়োর বীজ বা সালাদের ওপর ছড়িয়ে দুপুর/রাতের খাবারে।
৬. ভিটামিন C আয়রন শোষণ ও কোলাজেন তৈরিতে

ভিটামিন C শরীরে কোলাজেন তৈরি করে এবং আয়রন শোষণ বাড়ায়, যা চুলের গোড়ার জন্য জরুরি।
যেসব খাবারে পাবেন: লেবু, কমলা, বেরি, কিউই, বেল পেপার, স্ট্রবেরি।
কখন খাবেন: ছোট খাবার হিসেবে বেল পেপার সালাদ বা ফলের সালাদ হিসেবে।
৭. ভিটামিন D চুল গজানোর প্রক্রিয়া সক্রিয় করতে
কম ভিটামিন D থাকলে চুল গজানো বন্ধ হয়ে যায়। এটি বিভিন্ন থেরাপির সঙ্গে চুল গজাতে সাহায্য করে।
যেসব খাবারে পাবেন: ফ্যাটি মাছ, ফোর্টিফায়েড দুধ, ডিম, মাশরুম ও রোদ।
কখন খাবেন: সকাল–দুপুরে রোদে হাঁটুন বা সকালের নাস্তায় ফোর্টিফায়েড দুধ পান করুন।
৮. ভিটামিন E স্ক্যাল্পে রক্ত চলাচল বাড়াতে

এটি এক ধরনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা স্ক্যাল্পে রক্ত চলাচল উন্নত করে এবং চুল বাড়াতে সাহায্য করে।
যেসব খাবারে পাবেন: বাদাম, সূর্যমুখীর বীজ, পালং শাক, অ্যাভোকাডো, গমের অঙ্কুর।
কখন খাবেন: দুপুরে বাদাম/বীজ খান বা রাতে পালং শাকের সালাদ খেতে পারেন।
জিজ্ঞাসিত প্রশ্নসমূহ
চুল পড়লে কোন খাবার এড়িয়ে চলা উচিত?
অতিরিক্ত চিনি, ভাজা খাবার, বেশি দুগ্ধজাত খাবার, অ্যালকোহল, এবং হাই-মারকিউরি মাছ (যেমন টুনা) কম খেতে হবে।
শুধু ভালো খেলে কি চুল আবার গজাবে?
হ্যাঁ, পুষ্টির ঘাটতি দূর করলে চুল পড়া কমে এবং নতুন চুল গজায় আর এর জন্য চুলের যত্ন প্রয়োজন। প্রোটিন, ওমেগা-৩, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যুক্ত খাবার চুলের জন্য খুবই উপকারী।
ডায়েট পাল্টালে কতদিনে চুলে পরিবর্তন দেখা যাবে?
স্বাভাবিকভাবে চুল প্রতি মাসে প্রায় ১.২৫ সেন্টিমিটার বাড়ে। নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খেলে ৩–৬ মাসে দৃশ্যমান পরিবর্তন দেখা যায়।
চুল গজানোর জন্য কী ধরনের পানীয় খাওয়া উচিত?
পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। সঙ্গে গ্রীন টি বা পেপারমিন্ট টি, যা রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। স্পিনাচ, বেরি, চিয়া সিড ও সাইট্রাস ফল দিয়ে তৈরি স্মুদি ব্রেকফাস্ট বা ওয়ার্কআউটের পর খেতে পারেন।