চুল আমাদের রূপের মুকুট! কথাটা এমনিই বলা হয় না, চুল আমাদের সৌন্দর্যের প্রতীক। তবে যদি এই চুল পড়ে যেতে থাকে, এবং নতুন চুল গজাতে দেরি হয়? চিন্তার কারণ নেই, কেননা নতুন চুল গজানো অসম্ভব কিছু নয়। আমাদের নিত্যদিনের কিছু অভ্যাস, ঘরোয়া উপায়, ও সঠিক পুষ্টির মাধ্যমে আপনি পেতে পারেন ঘন, কালো, ও প্রাণবন্ত নতুন চুল! আমাদের আজকের ব্লগে আমরা জানবো নতুন চুল গজানর উপায়, এর পদ্ধতিসমূহ, এবং ঘরোয়া উপায়।

লাইফস্টাইল কৌশল ও চুল গজানোর পদ্ধতিসমূহ
সুস্থ ও সুন্দর চুল গজানোর পেছনে আমাদের দৈনন্দিন অভ্যাস, আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য, এবং শরীরের পুষ্টি অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। নিচে কিছু কার্যকরী কৌশল ও পদ্ধতি তুলে ধরা হলোঃ-
১) চুলের যত্ন
চুলের যত্নে যা যা ব্যবহার করবেনঃ-
- সালফেট ফ্রি শ্যাম্পু ব্যবহার করুন, এতে চুলের প্রাকৃতিক তেল নষ্ট হয় না।
- চুলে শ্যাম্পু বা অন্যান্য কিছু ব্যবহার করার সময় গরম পানি নয়, কুসুন গরম পানি ব্যবহার করুন, অথবা ঠান্ডা পানি। অতিরিক্ত গরম পানি মাথার চুলকে শুষ্ক করে ফেলে।
- দিনের দুইবার চুল ধীরে ধীরে ব্রাশ করুন, এতে আমাদের মাথার স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়।
২) ম্যাসাজ
- স্ক্যাল্পে তেল ম্যাসাজ করা নতুন চুল গজানোর জন্য খুবই উপকারী। প্রতি সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার নারিকেল তেল, অলিভ অয়েল, রোজমেরি অয়েল দিয়ে মাথার ত্বক ভালো করে ম্যাসাজ করুন।
- সঠিক ম্যাসাজে আমাদের স্ক্যাল্পে রক্ত চলাচল বারায় যা নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
৩) পুষ্টি ও খাদ্য
সঠিক খাবার চুলের বৃদ্ধির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চুলের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে ও ঘন রাখতে সঠিক খাদ্য গ্রহণ করা খুবই জরুরি। নিম্নে উল্লিখিত খাদ্যউপাদান গুলি আমাদের প্রতিদিনের তালিকাতে রাখা উচিতঃ-
আয়রনঃ আয়রনের ঘাটতি চুল পড়ার ও নতুন চুল না গজানোর অন্যতম কারণ। তাই চেষ্টা করুন আপনার নিত্যদিনের খাদ্য রুটিনে আয়রন যুক্ত খাবার রাখার। খাবার যেমন, পালংশাক, লাল মাংস, ডিম, লিভার ইত্যাদি আমাদের শরীরে আয়রনের জোগান দেয় ও নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
জিঙ্কঃ জিংক আমাদের চুলের টিস্যু মেরামত করে এবং চুলের নতুন কোষ বাড়াতে সাহায্য করে। বিভিন্ন খাবার যেমন চিংড়ি, মাংস, ডাল, বাদামে প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক থাকে, যা আমাদের চুলের গঠনে খুবই জরুরি।
ফ্যাটি অ্যাসিডঃ ফ্যাটি অ্যাসিড আমাদের চুলে আদ্রর্তা ধরে রাখে ও চুলের সুস্থতা বজায় রাখে। ফ্যাটি অ্যাসিড এর জন্য আপনি আপনার খাদ্য তালিকাতে রুই মাছ, কাতলা মাছ, সাদা তিল বা কালো তিল রাখতে পারেন।
৪) স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ
- স্টেস বা মানসিক চাপ আমাদের চুল পড়ে যাবার অন্যতম কারণ। স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল আমাদের চুল পড়ায়।
- এর প্রতিরোধ হিসেবে প্রতিদিন যোগব্যায়াম, মেডিটেশন বা হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
- প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম ও হাঁটা আমাদের শারীরিক উন্নতির সাথে সাথে চুলের উন্নতিতেও সাহায্য করে।

ঘরোয়াভাবে কীভাবে নতুন চুল গজানো যায়?
নতুন চুল গজাতে বাজারভিত্তিক অনেক পণ্য থাকলেও, অনেক ঘরোয়া প্রাকৃতিক উপায় রয়েছে যা নতুন চুল গজাতে বেশ কার্যকর। ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক হওয়ার কারণের এই উপায়গুলো নিরাপদ। নিম্নে উল্লিখিত উপায় গুলো নিয়মিত ব্যবহারে আপনার স্ক্যাল্প থাকবে সুস্থ ও নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবেঃ-
১) রেড জিনসেংঃ রেড জিনসেং একটি কোরিয়ান গিনসেং গাছের শুকনো ও প্রক্রিয়াজাত পদার্থ যাতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। গিনসেং আমাদের রক্ত সঞ্চালন বারায় এবং স্ক্যাল্পে পুষ্টির জোগান দেয়। এর উপাদান সমূহ আমাদের চুল পড়া কমায় এবং হেয়ার ফলিকলকে সক্রিয় করে, যা নতুন চুল গজাতে সহায়তা করে। মাসে ২ থেকে ৩ বার ম্যাসাজ করুন।
২) ফ্যাটি অ্যাসিডঃ ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬ সহ নানা ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিড সাধারণত ফিশ অয়েল, চিয়া সিড, ও অলিভ অয়েলে পাওয়া যায়। এটি আপনার স্ক্যাল্পের ইনফ্ল্যামেশন কমায়, যা চুলের বাড়াতে সাহায্য করে। এটি চুলের শিকড় মজবুত করে এবং হেয়ার ফলিকলকে পুষ্টি দিয়ে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
৩) ভিভিসকালঃ ভিভিসকাল খুবই উপকারী একটি উপাদান, যাতে রয়েছে ফিশ প্রোটিন, জিঙ্ক ও বায়োটিন। ভিভিসকাল চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে ও চুলকে করে ঘন ও শক্ত। এটি একটি সম্পূরক (supplement), তবে এটি নিয়মমেনে ঘরোয়া ভাবে ব্যবহার করলে ভাল ফলাফল পাওয়া যায়।
৪) জেরানিয়াম তেলঃ জেরানিয়াম নামক ফুল থেকে তৈরি একটি এসেনশিয়াল অয়েল যা ত্বক ও চুলের যত্নে অনেক বেশি ব্যবহার করা হয়। এই তেল আমাদের স্ক্যাল্পের রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং সিবাম নিয়ন্ত্রণ করে। এটি চুলের গোড়া মজবুত করে এবং নতুন চুল গজায়। নারকেল তেল এর সাথে মিশিয়ে সপ্তাহের ২ বার ব্যবহারে চুল থাকবে স্বাস্থ্যজ্বল।
৫) তিলের তেলঃ তিলের বীজ থেকে তৈরি হয় এই তেল। এই তেলে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ফ্যাটি অ্যাসিড। এটি আপনার চুলের গোড়ায় পুষ্টি জোগায়, স্ক্যাল্পের ড্যান্ড্রাফ কমায় এবং হেয়ার ফলিকলকে উদ্দীপিত করে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। নতুন চুল গজানোর সাথে সাথে এটি চুলের প্রাকৃতিক কালার ঘরে রাখতেও সাহায্য করে।
৬) অ্যালোভেরাঃ অ্যালোভেরা একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা ত্বক ও চুলের যত্নে বেশ কার্যকরী ও প্রাচীন কাল থেকে চলে আসছে। এতে থাকা এনজাইম ও ভিটামিন স্ক্যাল্পকে ঠান্ডা রাখে, চুল পড়া রোধ করে ও চুলের ফলিকলকে হাইড্রেট করে। অ্যালোভেরা জেল সরাসরি চুলের ব্যবহার যোগ্য। এই জেল চুলের ৩০ মিনিট ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন।
৭) রোজমেরি তেলঃ এটি একটি ভেষজ উপাদান যা চুলের বৃদ্ধির জন্য খুবই বিখ্যাত। এই তেলটি Minoxidil-এর মতো কাজ করে, এবং এটি গবেষণায় প্রমাণিত। এটি হেয়ার ফলিকল স্টিমুলেট করে এবং নতুন চুল গজানোর গতি বাড়ায়। সপ্তাহে ৩ বার আপনার স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করুন।
৮) পেঁয়াজের রসঃ পেঁয়াজ থেকে তৈরি রস চুলের জন্য খুবই উপকারী ও কার্যকরী। এতে থাকা সালফার আমাদের চুলের বৃদ্ধিতে অনেক বেশি কাজ করে। সালফার চুলের জন্য কোলাজেন তৈরিতে সাহায্য করে, রক্ত সঞ্চালন বারায় এবং চুলে গজাতে সাহায্য করে। পেঁয়াজ এর রস সরাসরি স্ক্যাল্পে লাগিয়ে ২০–৩০ মিনিট রেখে হালকা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
কমন প্রশ্নসমূহঃ
চুল পড়লে কি নতুন চুল গজায়?
হ্যাঁ, অবশ্যই, তবে এটি নির্ভর করে আপনার চুলের বর্তমাল অবস্থার উপরে। যদি হেয়ার ফলিকল জীবিত থাকলে সঠিক যত্নে নতুন চুল গজানো সম্ভব।
নতুন চুল গজাতে কতদিন সময় লাগে ও কত বছর বয়স পর্যন্ত চুল গজায়?
নতুন চুল গজাতে সাধারণত ২ থেকে ৩ মাস সময় লাগে। সাধারণত ৫০ থেকে ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত চুল গজানো সম্ভব হলেও বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর গতি কমতে থাকে।
নতুন চুল গজানোর জন্য কোন তেল ভালো?
নতুন চুল গজানোর জন্য রোজমেরি তেল, পেঁয়াজের রস, নারিকেল তেল ও ক্যাস্টর অয়েল সবচেয়ে কার্যকরী।
চুল ও ত্বকের যত্ন সম্পর্কিত টিপস পেতে আমাদের ব্লগ ভিজিট করুন
সেরা হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্টস কিনতে Beauty Booth Bangladesh!