ব্রণ আমাদের জীবনে এক অবাঞ্ছিত অতিথি, হুট করে এসে পড়ে আর যেতেই চায় না! আরও মেজাজ গরম হবে যখন দেখবেন বিশেষ কোনো অনুষ্ঠানের আগে ব্রণ এসে হাজির, তখন খুজোখুজি করতে হয় ব্রণের গর্ত দূর করার ঘরোয়া উপায় বা ব্রণের গর্ত দূর করার ক্রিম, খুঁজার সাথে সাথে হতাশাও বাড়তে থাকে। তাই যত্ন আগের থেকেই নেয়া দরকার, দরকার দৈনন্দিন রুটিন পরিবর্তন করা ও কিছু নিয়ম মেনে চলা।
এখন কথা হলো আসলেই কি এক সপ্তাহে ব্রণ দূর করা সম্ভব?
উত্তর হ্যাঁ, সম্ভব। তবে এটা অবশ্যই নির্ভর করে ব্রণের ধরণ, আপনার ত্বকের যত্নের পদ্ধতি ও স্কিন টাইপের উপরে।
আমাদের আজকের এই ব্লগে জানবো সঠিক স্কিনকেয়ার এর মাধ্যমে কিভাবে ব্রণ দূর করবেন, যত্নের নিয়ম ও কিছু কার্যকর সমাধান।
ব্রণ কেন হয়?
আমাদের অনেকের ধারণা ব্রণ শুধু অয়েলি স্কিনেই হয়, কথাটা সম্পূর্ণ ভুল নয় তবে অয়েলি স্কিন ছাড়াও অনন্য ত্বকেও ব্রণ হয়। ব্রণ শুধু অতিরিক্ত তেলের জন্যই নয় আরও কারণে হয়ে থাকে।
- অতিরিক্ত তেল উৎপাদনঃ আমাদের ত্বকে স্বাভাবিক ভাবেই তেল উৎপন্ন হয়, তবে অতিরিক্ত বেশি তেল উৎপন্ন হলে লোমকূপ বন্ধ হয়ে পড়ে এতে লোমকূপ আটকে যায় ও ব্রণের দেখা দেয়।
- মৃত কোষ জমে থাকাঃ আমাদের স্কিনে প্রতিনিয়ত মৃত কোষ জমতে থাকে, যদি এটি সঠিকভাবে পরিষ্কার না করা হয় তবে লোমকূপ আটকে যায় এবং ব্রণের দেখা মিলে
- ব্যাকটেরিয়া এর কারণেঃ আমাদের ত্বকে প্রোপিওনিব্যাকটেরিয়াম অ্যাকনে ( Propionibacterium acnes ) ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হলে এতে ইনফ্লামেশন হয় যা ব্রণের প্রধান কারণ
- হরমোনাল পরিবর্তনঃ কিশোর বয়সে হরমোনাল ইমব্যালান্সের কারণে মেয়েদের মুখের ব্রণের দেখা দেয়
- খাদ্যাভ্যাস ও স্ট্রেসঃ অতিরিক্ত বাহিরের খাবার এবং জাঙ্ক ফুডের কারণে আমাদের ত্বকে ব্রণের দেখা দেয়
ব্রণ কত ধরনের এবং কী কী?
মুখে ব্রণের দেখা দিলে চিকিৎসা করার আগে জানা দরকার আপনি কোন ধরণের ব্রণের সমস্যাতে ভুগছেন। সেটা জানা হলে গেলে চিকিৎসা করা টাও সহজ হয়ে পড়ে।
ব্রণ কয় ধরনের?
- হোয়াইটহেডস (Whiteheads)
- ব্ল্যাকহেডস (Blackheads)
- প্যাপুলস (Papules)
- পাসটুলস (Pustules)
- নোডিউলস (Nodules)
- সিস্টিক অ্যাকনে (Cystic Acne)
হোয়াইটহেডস (Whiteheads)
আমাদের লোমকূপ বন্ধ হয়ে গেলে ও মৃত কোষ জমে গেলে হোয়াইটহেডস এর দেখা মিলে। এগুলো সাদা বা ত্বকের রঙের মতো দেখায় এবং ব্যথাহীন হয়। এগুলো বেশিরভাগ অয়েলি ও সেনসিটিভ স্কিনে দেখা দেয়।
ব্ল্যাকহেডস (Blackheads)
হোয়াইটহেডস এর মতোই লোমকূপে তেল ও ময়লা জমে ব্ল্যাকহেডস হয়, তবে খোলা থাকার কারণে বাতাদের সংস্পর্শে এসে কালো হয়ে যায়। এগুলো বেশির ভাগ নাক, কপাল ও চিবুকে বেশি দেখা যায়।
প্যাপুলস (Papules)
ত্বকের লোমকূপে যখন ব্লকেজ তৈরি হয়, তা ছোট লালচে ব্রণে পরিণত হয়। এগুলো চাপ দিলে ব্যথা লাগে এবং সাথে সংক্রামক হিসেবেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
পাসটুলস (Pustules)
এ ধরণের ব্রণ প্যাপুলসের চেয়ে বড় এবং এর মধ্যে হলুদ বা সাদা রঙের পুঁজ থাকে। ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ফলে হয় এবং ব্যথাযুক্ত। এগুলো ফাটানোও বিপজ্জনক যা ত্বকে দাগ ফেলতে পারে।
নোডিউলস (Nodules)
আমাদের ত্বকের গভীরে যখন ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়ে তখন ব্রণ গভীর ও শক্ত হয়। এগুলো ব্যথাযুক্ত এবং চিকিৎসা করা কঠিন হয়ে পড়ে। এগুলো হরমোনাল ব্রণ যা হরমোন পরিবর্তনের কারণে হয়।
সিস্টিক অ্যাকনে (Cystic Acne)
এটি ব্রণের সবচেয়ে কঠিন ও জটিল ধরণ যা বড়, নরম, ও পুঁজযুক্ত হয়। এটি দীর্ঘস্থায়ী হয় ও খুব ব্যথাদায়ক।
৭ দিনে ব্রণ দূর করার ঘরোয়া উপায়
যারা ত্বকে যত্নে কেমিক্যাল যুক্ত পণ্য কম ব্যবহার করতে চান, এবং প্রাকৃতিক উপায় ব্যবহার করতে চান তাদের জন্য ব্রণ দূর করার কিছু ঘরোয়া উপায়।
১. মধু ও দারুচিনি প্যাক
মুখের ব্রণ দূর করার জন্য মধু ও দারুচিনি প্যাক খুবই কার্যকরী। মধু ও দারুচিনি দুটোই অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, যা ব্রণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে।
২. লেবুর রস
লেবু প্রাকৃতিক ভিটামিন সি ( C ) এর যোগান দাতা। এটি ব্রনের দাগ কমায় ও আমাদের ত্বক উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।
৩. অ্যালোভেরা জেল
অ্যালোভেরা একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান। যা ত্বকের ব্রণের লালচে ভাব কমায় ত্বকে হাইড্রেশন বজায় রাখে।
৪. গ্রিন টি টোনার
গ্রিন টি তে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান ত্বকে ব্রণ কমাতে খুব ভালোভাবে কাজ করে।
৫. হলুদ ও দুধের ফেসপ্যাক
হলুদ ও দুধের ফেসপ্যাক কেন উপকারী? হলুদ প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক যা ত্বকে ব্রণ দ্বারা সৃষ্ট গর্ত কমাতে সাহায্য করে।
৬. বরফ থেরাপি
ব্রণে বরফ ব্যবহার করা খুব প্রাচীন এবং কার্যকরী একটি উপাদান। বরফ ত্বকের জ্বালাপোড়া কমায় ও ব্রণের ব্যথা উপশম করে।
ব্রণ দূর করার দৈনন্দিন রুটিন
ব্রণ দূর করার ক্ষেত্রে কিছু নিত্যদিনের রুটিন অনুসরণ করলে কয়েকদিনেই আপনার ত্বকের ব্রণ দূর করা সম্ভব।
সকালে ত্বকের যত্নে
- ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ পরিষ্কার করুন।
- গ্রিন টি বা রোজ ওয়াটার এর টোনার ব্যবহার করুন।
- ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
- সূর্যের ক্ষতিকারক রক্ষ্মি থেকে ত্বককে সুরক্ষিত রাখতে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
রাতে ত্বকের যত্নে
- মেকআপ ব্যবহার করে থাকলে ভালোকরে তুলে ফেলুন।
- গভীরভাবে পরিষ্কার এর জন্য স্যালিসাইলিক অ্যাসিড বা গ্লাইকোলিক অ্যাসিডযুক্ত ফেসওয়াশ ব্যবহার করুন।
- ত্বকের যত্নে সিরাম ব্যবহার করুন।
- ঘুমানোর আগে মইশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
এক সপ্তাহে ব্রণের দাগ দূর করার উপায় গুলো কি আসলেই কাজ করে?
ব্রণের দাগ দূর করার জন্য কি এক সপ্তাহ যথেষ্ট? নাকি এটা শুধুই একটা ধারণা বা মিথ?
আসলে ত্বকের ভালো যত্নে ও কিছু নিয়ম মেনে চললে ব্রণ দূর করা সম্ভব।
ব্রণের দাগ হালকা করতে কি কি কাজ করে?
- ভিটামিন সি সিরাম, যা ত্বকের দাগ হালকা করে ও ত্বক উজ্জ্বল রাখে।
- অ্যালোভেরা জেল, যা ত্বক পুনর্গঠনে কাজ করে।
- নিয়মিত এক্সফোলিয়েশন (BHA/AHA), এটি ত্বকের মৃত কোষ দূর করে দাগ কমাতে সাহায্য করে।
- সানস্ক্রিন ত্বকে থাকা দাগ আরও গভীর হওয়া থেকে রোধ করে।
এক সপ্তাহে ব্রণের দাগ দূর করায় যা যা কাজ করবে না
- সম্পূর্ণ ব্রণের গর্ত এক সপ্তাহে ঠিক হবে না, এর জন্য দরকার নিত্যদিনের যত্ন ও দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা।
- খুব গভীর হয়ে যাওয়া কালো দাগ। ত্বকের বেশি গভীর ও কালো হয়ে যাওয়া ত্বক সুস্থ করতে একটু সময় দরকার হয়।
- আর কখনোই কেউ যদি বলে থাকে, মাত্র ১ থেকে ২ দিনে স্থায়ী সমাধান দেয়া সম্ভব তাহলে তা কখনোই সম্ভব নয়।
যেকোনো ত্বকের যত্নে ধৈর্য ধরা খুব বেশি জরুরীসাথে নিয়মিত ত্বকের যত্ন নিন।
উপসংহার
স্বাস্থ্যকর ও উজ্জ্বল ত্বক শুধু আমাদের সৌন্দর্যের সাথে সাথে আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতেও সাহায্য করে। ব্রণ দূর হবে তবে এর জন্য কিছু ধৈর্য ধারণ করতে হবে ও নিয়মিত সঠিক পরিচর্যা করা লাগবে।
Hi, this is a comment.
To get started with moderating, editing, and deleting comments, please visit the Comments screen in the dashboard.
Commenter avatars come from Gravatar.